জুরাসিক পার্ক – মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ; পর্ব ৯)
ওর মা ওকে হাত নেড়ে ফিরে আসার ইশারা করছে। টিনা হাসতে হাসতে হাত নাড়ল, এমন ভাণ করল যেন ও কিছু বুঝতে পারছে না। আসলে টিনা সানস্ক্রিন মাখতে চাইছিল না। আর ফিরে গিয়ে ওর মা'র ওজন কমানোর ঘ্যানঘ্যানানিও শুনতে চাইছিল না। এখানেই বসে থাকতে চাইছিল, হয়তো তাতে একটা স্লথ্ও দেখা যেতে পারে।
“এই,” টিনা যেন
কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে। “এই গাইডবুকটায় লেখা আছে যে কাবো ব্ল্যাঙ্কোর বিচগুলোতে
অনেক ধরনের জন্তুজানোয়ারের সমাহার রয়েছে, যেমন হাউলার আর হোয়াইট-ফেসড্ মাঙ্কি (White-faced
Monkey), থ্রী-টোড্ স্লথ্ (Three-toed
Sloth), আর কোয়াটিমান্ডিস্ (Coatimundis)। তোমার কি মনে হয় আমরা
থ্রী-টোড্ স্লথ্ দেখতে পাব, বাবা?”
“আমি বাজি ধরে বলতে পারি পাব।”
“সত্যি?”
“শুধু আয়নাটার দিকে একবার
তাকাও।”
“তুমিও না, বাবা।”
সামনের রাস্তাটা জঙ্গলের
মধ্যে দিয়ে ঢালু হয়ে সমুদ্রের দিকে নেমে গেছে।
থ্রি-টোড স্লথ
|
হোয়াইট-ফেসড্ মাঙ্কি
|
কোয়াটিমান্ডিস
|
শেষমেশ যখন ওরা সমুদ্র
সৈকতটায় এসে পৌঁছল মাইকের নিজেকে নায়ক বলে মনে হচ্ছিল; দু’মাইল জুড়ে এক ফালি চাঁদের মতো সাদা বালির একটা বেলাভূমি পুরো ফাঁকা। ও ল্যান্ড রোভারটাকে
তালগাছগুলোর ছায়ায়, যেগুলো এই সৈকতটাকে ছাতার মতো ঢেকে রেখেছে, সেখানে পার্ক করল। তারপরে লাঞ্চবক্সগুলো বের করে আনল। এ্যলেন স্যুইম্ স্যুট্ পরতে পরতে বলল, “সত্যি, কী করে যে আমার ওজনটা কমাব ভেবেই পাচ্ছি না।”
“তোমাকে দারুণ দেখতে লাগছে, হানি।” আসলে মাইকের মনে হচ্ছিল
যে এ্যলেন বেশ ভালই রোগা, কিন্তু ও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিখে গিয়েছিল যে এ-কথা বলতে নেই।
টিনা এর মধ্যেই সৈকতের মধ্যে
দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে।
“সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলে যেয়ো না,” এ্যলেন বলে উঠল।
“পরে,” টিনা মাথাটা
ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে বলল। “আমি দেখতে যাচ্ছি যদি এখানে কোনও স্লথ্ থেকে থাকে তো।”
এ্যলেন বোম্যান সৈকতটা আর
গাছগুলোর দিকে একবার ভাল করে দেখে বলল, “তোমার কী মনে হয়, ও
একা একা গেলে কোনও কিছু হবে না তো?”
“হানি, এক মাইলের
মধ্যেও কেউ নেই,” মাইক বলল।
“সাপখোপ থাকে যদি?”
“ওহ্, ভগবানের নামে,” মাইক বলে উঠল। “বিচে কখনও সাপ থাকে না।”
“বেশ, কিন্তু এখানে
তো থাকতে পারে...”
“হানি,” মাইক বলল। “সাপেদের রক্ত ঠাণ্ডা
হয়। ওরা সরীসৃপ। ওরা নিজেদের শরীরের
তাপমাত্রা ঠিকঠাক ধরে রাখতে পারে না। ওই বালির তাপমাত্রা প্রায় নব্বই ডিগ্রী হয়ে রয়েছে। যদি একটা সাপ থেকেও
থাকে তাহলে সেটা সেদ্ধ হয়ে যাবে। বিশ্বাস করো। বিচে কোনও সাপ নেই।” ও দেখল টিনা খুব জোরে সৈকতের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে, ওকে দেখে মনে
হচ্ছে যেন সাদা বালিতে একটা কালো বিন্দু নড়াচড়া করছে। “ওকে যেতে দাও। একটু আনন্দ করতে দাও।”
মাইক তার স্ত্রী'র কোমরে হাতটা
রাখল।
টিনা ক্লান্ত না হওয়া অবধি
দৌড়তে লাগল, তারপরে বালিতে গড়াগড়ি দিয়ে খুব আনন্দের সাথে জলের দিকে গড়াতে শুরু করল। সুমদ্রের জলটা উষ্ণ, জল থেকে খুবই
কম ফেনা তৈরি হচ্ছে। ও জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে কিছুক্ষণ বসে থাকল, কত দূর এসেছে
জানার জন্য পিছনে তাকিয়ে বাবা-মা আর গাড়িটাকে খুঁজল।ওর মা ওকে হাত নেড়ে ফিরে আসার ইশারা করছে। টিনা হাসতে হাসতে হাত নাড়ল, এমন ভাণ করল যেন ও কিছু বুঝতে পারছে না। আসলে টিনা সানস্ক্রিন মাখতে চাইছিল না। আর ফিরে গিয়ে ওর মা'র ওজন কমানোর ঘ্যানঘ্যানানিও শুনতে চাইছিল না। এখানেই বসে থাকতে চাইছিল, হয়তো তাতে একটা স্লথ্ও দেখা যেতে পারে।
টিনা দু’দিন আগে স্যান
জোস-এর চিড়িয়াখানায় একটা স্লথ্ দেখেছে। ওটাকে দেখে একটা সঙের মতো মনে
হচ্ছিল, আর ক্ষতিকর বলেও মনে হচ্ছিল না। কোনওরকম ভাবে, ওটা খুব একটা
জোরে দৌড়াতে না পারলে; ও খুব সহজেই ওটাকে প্রতিযোগিতায়
হারিয়ে দেবে।
এবার ওর মা ওকে ডাকতে শুরু করল। টিনা ঠিক করল রোদের
তাপ আর জল থেকে উঠে গিয়ে ওই তালগাছগুলোর ছায়ার নীচে যাবে। সৈকতের এদিকটায়, তালগাছগুলো জড়ামড়ি
করে থাকা ম্যানগ্রোভ গাছের মূলগুলোর দিকে হেলে পড়েছে, যাতে
ভিতরের জায়গাটা বাইরে থেকে আসা যে-কোনও আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত রয়েছে। টিনা বালিতে বসে পড়ে গাছের
শুকনো ঝরা পাতাগুলোকে লাথি মারতে লাগল। এমন সময় ও বালির উপরে পাখি হাঁটলে যেরকম দাগ হয় সেরকম
অনেকগুলো দাগ লক্ষ্য করল। কোস্টা রিকা এখানকার পাখির জন্য বিখ্যাত। গাইডবুক বলছে কোস্টা রিকা-য়
আমেরিকা ও কানাডার তিনগুণ বেশি পাখি রয়েছে।
বালিতে কোনও এক ধরনের তিন আঙুলওয়ালা
পাখির ছোট ছোট কিছু পায়ের ছাপ পড়েছে যেগুলো এতটাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে যে কষ্ট করে
দেখতে হচ্ছে। আবার কিছু পায়ের ছাপ বড়, যেগুলো বালিতে
যেন কেটে বসে গেছে। টিনা অলস ভাবে পায়ের ছাপগুলো দেখছিল, হঠাৎ ম্যানগ্রোভের
ঝোপটা থেকে ও পাখির কিচিরমিচিরের মতো আর তার সাথে একটা খসখস আওয়াজ শুনতে পেল।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment