জুরাসিক পার্ক – মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ; পর্ব ১০)
স্লথ কি পাখির মতো কিচিরমিচির
করে আওয়াজ করে? টিনার মনে হল, না, কিন্তু ও
পুরোপুরি নিশ্চিতও ছিল না। এটা নিশ্চয়ই কিছু সামুদ্রিক পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। ও শান্ত স্থির হয়ে
দাঁড়াল, খসখস আওয়াজটা আবার শুনতে পেল। তারপরে কয়েক গজ দূরে আওয়াজটার
উৎস দেখতে পেল। একটা
সরীসৃপ ম্যানগ্রোভের ঝোপটা থেকে বেরিয়ে এসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
টিনার মনটা আনন্দে
ভরে গেল। লিস্টে
লেখার জন্য একটা নতুন প্রাণী ! সরীসৃপটা ওর মোটা লেজ আর পিছনের দু’পায়ের উপর ভর
দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রাণীটা দাঁড়ানো অবস্থায় প্রায় এক ফুটের মতো লম্বা, গায়ের রং কালচে
সবুজ, পিঠে কালো কালো ডোরাকাটা দাগ। সামনের খুবই ছোট পা দু’টো ছোট ছোট
আঙুলে এসে শেষ হয়েছে যেগুলো হাওয়ায় দুলছে। সরীসৃপটা মাথাটা বেকিয়ে এমন ভাবে
টিনার দিকে তাকাল যেন মনে হয় ওকে খুব ভাল করে দেখছে।
টিনা ভাবল খুব সুন্দর তো। অনেকটা একটা বড় স্যালাম্যান্ডার-এর
(Salamander) মতো দেখতে। ও হাত বাড়িয়ে ওটার আঙুলগুলো একটু নেড়ে দিল।
স্যালাম্যান্ডার
|
সরীসৃপটা কিন্তু ভয় পেল না। পিছনের পায়ের উপর ভর
দিয়ে হেঁটে ওর সামনে এসে দাঁড়াল। প্রায় একটা মুরগির মতো বড়, আর একটা মুরগির মতোই চলার সময়
মাথাটা দোলাচ্ছে। টিনা ভাবল এটা দারুণ একটা পোষার জিনিস হবে।
ও লক্ষ্য করল এই সরীসৃপটারই
পায়ের ছাপ সেই তিন আঙুলওয়ালা পায়ের ছাপ, যেটাকে কিছুক্ষণ আগে ওর পাখির পায়ের ছাপ
বলে মনে হয়েছিল। সরীসৃপটা টিনার কাছে এগিয়ে এল। টিনা স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ও এই ছোট প্রাণীটাকে
ভয় পাওয়াতে চাইছিল না। এটা দেখে ও খুবই অবাক হল যে প্রাণীটা ওর একেবারে কাছে চলে
এসেছে, কিন্তু ওর মাথায় ছিল যে এটা একটা ন্যাশনাল পার্ক। সাধারণত, একটা পার্কের
সমস্ত প্রাণীদেরই জানা থাকে যে তারা পার্কের মধ্যে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ থাকবে। এই সরীসৃপটা হয়তো
কারোর পোষা। হয়তো
এটা এ-ও ভাবছে যে ওকে কিছু খাবার দেওয়া হবে। দুর্ভাগ্যবশত টিনার কাছে কোনও খাবার ছিল না। ওর কাছে যে কোনও
খাবার নেই সেটা দেখানোর জন্য টিনা প্রাণীটার দিকে ওর হাতের মুঠোটা খুলে দেখাল।
সরীসৃপটা থমকে দাঁড়াল, মাথাটা দোলাতে লাগল, আর কিচিরমিচিরের মতো আওয়াজ করতে লাগল।
সরীসৃপটা থমকে দাঁড়াল, মাথাটা দোলাতে লাগল, আর কিচিরমিচিরের মতো আওয়াজ করতে লাগল।
“সরি,” টিনা বলল। “আমার কাছে কিছুই নেই।”
আর তারপরেই, কোনওরকম পূর্বাভাস
ছাড়াই, সরীসৃপটা ওর সামনের দিকে বাড়িয়ে রাখা হাতের উপর লাফ
দিয়ে উঠল। টিনা
অনুভব করল ওটার ছোট ছোট আঙুলগুলো ওর হাতের তালুর চামড়ায় ফুটে যাচ্ছে, আর সাথে সাথে
এটাও অনুভব করল এই ছোট প্রাণীটার অস্বাভাবিক ওজন ওর হাতটাকে যেন চাপ দিয়ে নীচের
দিকে নামিয়ে দিচ্ছে।
আর তারপরে সরীসৃপটা যেন হামাগুড়ি
দেওয়ার মতো করে বেয়ে বেয়ে হাত থেকে ওর মুখের দিকে এগোতে লাগল।
“আমি শুধু এটাই চাই যে ওকে
যেন খুঁজে পাওয়া যায়,” এ্যলেন রোদের তাপে ভ্রূকুটি করে কথাটা বলল। “ব্যস, এই, শুধু যেন ওকে দেখতে পাই।”
“আমি পুরো নিশ্চিত যে ও ঠিকই
আছে,” হোটেল থেকে দেওয়া লাঞ্চবক্সগুলো খুলতে খুলতে মাইক কথাটা বলল। লাঞ্চবক্সে অরুচি
ধরানো গ্রিলড্ চিকেন, আর মাংস-ভর্তি এক ধরনের পেস্ট্রি দেওয়া রয়েছে। এগুলো দেখে এ্যলেন না
আবার খিটখিট করতে থাকে।
“তোমার কি মনে হচ্ছে না যে ও বিচ
ছেড়ে অন্য কোথাও গেছে?” এ্যলেন জিজ্ঞেস করল।
“না, হানি, মনে তো হয় না।”
“আমার এই জায়গাটা খুব নির্জন
বলে মনে হচ্ছে,” এ্যলেন বলল।
“আমি ভেবেছিলাম তুমি এরকম
একটা জায়গাতেই ছুটিটা কাটাতে চেয়েছিলে,” মাইক বলল।
“চেয়েছিলাম।”
“বেশ, তাহলে,
সমস্যাটা কোথায়?”
“আমি শুধু আমার মেয়েকে দেখতে
চাই, ব্যস, এই,” এ্যলেন বলল।
তখনই, সৈকতের দিক
থেকে ভেসে আসা হাওয়ায় ওরা ওদের মেয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেল। ও চিৎকার করছে।
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment