জুরাসিক পার্ক – মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ; পর্ব ৮)
প্রথম পুনরাবৃত্তি
অবশ্যই ওদের মধ্যে এই নিয়ে বেশ ভালই কথা কাটাকাটি হয়েছিল, মাইকের মনে হয়েছিল যে এ্যলেন আগেও ওকে মিথ্যা কথা বলেছে আর এখনও বলে যাচ্ছে। মাইক এই প্ল্যাস্টিক সার্জারির ব্যাপারটা একেবারে বাতিল করে দিল। যাই হোক, এটা খুবই একটা হাস্যকর ব্যাপার, কেননা এ্যলেনের বয়স মাত্র তিরিশ আর সে প্রকৃতই সুন্দরী। রাইস-এর (Rice) সিনিয়র ইয়ারে ওকে ওখানকার কুইন বলে ডাকা হতো, আর সেটাও খুব বেশি হলে মাত্র বছর দশেক আগেকার ঘটনা। কিন্তু এ্যলেনের নিজেকে আর খুব একটা সুন্দরী বলে মনে হচ্ছিল না, তাই নিয়ে ও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। আর সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে ও নিজের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে ভেবেই বেশি চিন্তা করেছে।
প্রথম পুনরাবৃত্তি
“সম্প্রতি আঁকা কিছু ফ্র্যাক্টাল১ কার্ভ২-এ, গণিতশাস্ত্রের
গঠনের মূলগত বেশ কিছু সূত্র দেখা যাবে।” —ইয়ান ম্যালকম। [১Fractal—ফ্র্যাক্টাল হল একটি সাধারণ
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু বা ব্যাপার অথবা একটি গাণিতিক বিন্যাস যেটি বারংবার হতে
থাকা এমন একটি নকশা যা প্রত্যেকটি ক্রমপর্যায়াঙ্কিত মাপকে দেখায়, ২Curve—বক্ররেখা]
প্রায় স্বর্গ
মাইক বোম্যান কোস্টা রিকা-র পশ্চিম উপকূলের
কাবো ব্ল্যাঙ্কো (Cabo Blanco) বায়োলজিক্যাল রিজার্ভ*-এর মধ্যে দিয়ে মনের
আনন্দে শিষ দিতে দিতে ল্যান্ড রোভার গাড়িটা চালাচ্ছিল। জুলাই মাসের সুন্দর একটা সকাল, সামনের
রাস্তাটা খুবই সুন্দর আর সুবিন্যস্ত হয়ে আছে; মনে হচ্ছে যেন
পাহাড়ের খাড়াইয়ের প্রান্তে জড়াজড়ি করে রয়েছে, এত উঁচু থেকে
জঙ্গল প্রায় দেখাই যাচ্ছে না, সামনে শুধুই নীল জলরাশি। গাইডবুক অনুসারে, কাবো
ব্ল্যাঙ্কো সভ্য মানুষের পা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া বনভূমি নয়, প্রায়
স্বর্গের মতোই একটা জায়গা। বোম্যান এখন এই জায়গাটা দেখে মনে মনে ভাবল ছুটিটা বেশ ভালই
জমবে। *[Biological
reserve—জীববিজ্ঞানের জন্য সংরক্ষিত ভূমি]
বোম্যান, ছত্রিশ বছর বয়সি
ডালাসের এক রিয়াল এস্টেট ডেভেলপার, স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে কোস্টা
রিকা-য় দু’-সপ্তাহের ছুটি কাটাতে এসেছে। এখানে ঘুরতে আসার পরিকল্পনাটা
আসলে ওর স্ত্রী'র; কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ্যলেন ওকে কোস্টা রিকা-র এই সুন্দর ন্যাশনাল পার্কের
কথা বলে আসছে, আর বলেছে যে এতে টিনাও খুব খুশি হবে। তারপর যখন ওরা এখানে এল, মাইক আবিষ্কার
করল যে এ্যলেনের স্যান জোস-এ একজন প্ল্যাস্টিক সার্জেনের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তখনই প্রথম মাইক কোস্টা
রিকা-র সস্তা আর চমৎকার প্ল্যাস্টিক সার্জারির ব্যাপারটা এবং স্যান জোস-এর সমস্ত
বিলাসবহুল ক্লিনিকগুলোর কথা জানতে পারল।অবশ্যই ওদের মধ্যে এই নিয়ে বেশ ভালই কথা কাটাকাটি হয়েছিল, মাইকের মনে হয়েছিল যে এ্যলেন আগেও ওকে মিথ্যা কথা বলেছে আর এখনও বলে যাচ্ছে। মাইক এই প্ল্যাস্টিক সার্জারির ব্যাপারটা একেবারে বাতিল করে দিল। যাই হোক, এটা খুবই একটা হাস্যকর ব্যাপার, কেননা এ্যলেনের বয়স মাত্র তিরিশ আর সে প্রকৃতই সুন্দরী। রাইস-এর (Rice) সিনিয়র ইয়ারে ওকে ওখানকার কুইন বলে ডাকা হতো, আর সেটাও খুব বেশি হলে মাত্র বছর দশেক আগেকার ঘটনা। কিন্তু এ্যলেনের নিজেকে আর খুব একটা সুন্দরী বলে মনে হচ্ছিল না, তাই নিয়ে ও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। আর সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে ও নিজের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে ভেবেই বেশি চিন্তা করেছে।
শুধু ওই ব্যাপারটাই, আর কিছু নিয়ে
নয়।
ল্যান্ড রোভারটা একটা গাড্ডায়
পড়ে কিছুটা কাদা ছিটিয়ে দিল। এ্যলেন মাইকের পাশে বসেছিল, বলল, “মাইক, তুমি কি শিয়োর যে তুমি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছ? একঘণ্টা
হয়ে গেল একটা লোকও তো দেখতে পাওয়া গেল না।”
“পনেরো মিনিট আগেই একটা গাড়ি
আমাদের পাশ দিয়ে গেছে,” মাইক ওকে মনে করিয়ে দিল। “মনে আছে, একটা নীল রঙের
গাড়ি?”
“ওটা তো অন্য দিকে গেল...”
“ডার্লিং, তুমি একটা
ফাঁকা সী-বিচে ছুটিটা কাটাতে চেয়েছিলে,” মাইক বলল, “আর তুমি ঠিক সেটাই পেতে চলেছ।”
এ্যলেন একটু কিন্তু কিন্তু
করে মাথাটা নাড়ল। “আশা
করি তোমার কথাই যেন ঠিক হয়।”
“হ্যাঁ, বাবা, আশা করি তোমার কথাই যেন ঠিক হয়,” পিছনের সিট থেকে
ওদের আট বছর বয়সি মেয়ে ক্রিস্টিনা কথাটা বলে উঠল।
“বিশ্বাস করো, আমি ঠিকই
যাচ্ছি।” এক
মুহূর্ত চুপ থেকে মাইক কথাটা বলল। “জায়গাটা খুব সুন্দর, তাই না? চারদিকে
তাকাও। কত
সুন্দর।”
“ঠিক আছে,” টিনা বলল।
এ্যলেন একটা কম্প্যাক্ট (Compact)
বের করে আয়নার দিকে তাকিয়ে সেটাকে ওর চোখের তলায় লাগাচ্ছিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও কম্প্যাক্টটাকে
আবার ব্যাগের ভিতরে রেখে দিল।
রাস্তাটা এবার ঢালু হয়ে নেমে
গেছে, মাইক গাড়ি চালানোতে একটু বেশি করে মন দিল। হঠাৎ একটা কালো রঙের ছোট কিছু
সামনের রাস্তাটা পেরোতেই টিনা চিৎকার করে উঠল, “দ্যাখো ! দ্যাখো !” ততক্ষণে
জিনিসটা জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেছে।
“কী ছিল ওটা?” এ্যলেন জিজ্ঞেস
করল। “বাঁদর?”
“হয়তো একটা স্কুইরেল মাঙ্কি (Squirrel Monkey) হবে,” মাইক বলল।
“এটা কি লিখে রাখব?” টিনা
পেন্সিল বের করে বলল, ও স্কুলের একটা প্রোজেক্টের জন্য এই
ট্রিপটায় কী কী পশুপাখি দেখেছে সেটার একটা লিস্ট বানাচ্ছে।
“ঠিক জানি না,” মাইক একটু
ইতস্তত করে বলল।
টিনা গাইডবুক বের করে তাতে
দেওয়া জন্তুজানোয়ারের ছবিগুলো দেখছিল। বলল, “আমার মনে হয় না ওটা কোনও স্কুইরেল মাঙ্কি ছিল, মনে হয় আরেকটা হাউলার।” ওরা এই ট্রিপটায় এর মধ্যেই অনেকগুলো হাউলার মাঙ্কি (Howler Monkey) দেখেছে।
ক্রমশ...
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment