ববি ম্যানুয়েলকে কাজ করার জন্য ফিরে
আসার হুকুম করল, এরই মধ্যে ওই আহত যুবক ছেলেটি চোখ খুলল আর সোজা টেবিলের উপরে উঠে বসল। ম্যানুয়েল আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। আহত ছেলেটি উঠে বসে জোরে জোরে ডান দিকে বাঁদিকে মাথা
দোলাতে লাগল আর বিলাপ করতে থাকল, আর তারপরেই বিস্ফোরকের মতো রক্তবমি করতে লাগল। তৎক্ষণাৎ ওর একটা কনভালশন* হয়ে গেল, সারা দেহটা প্রচণ্ড ভাবে
কাঁপতে লাগল। ববি ওকে ধরতে গেল কিন্তু ও তার
আগেই টেবিল থেকে মেঝের উপরে পড়ে গেল। আবার বমি করল। চারদিক রক্তে ভেসে গেল। এমন সময় এড দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে উঠল, “এখানে হচ্ছেটা কী?”
বলে যখন ওর রক্তের দিকে চোখ গেল, ও মুখ চাপা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ববি একটা লাঠি নিয়ে ছেলেটার আটকে যাওয়া চোয়ালের মধ্যে
ঢোকানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু ও ভাল করেই বুঝতে পারছিল যে সেটা করা বৃথা। শেষে পক্ষাঘাতের মতো একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছেলেটা শান্ত হয়ে
গিয়ে স্থির হয়ে শুয়ে পড়ল। *[Convulsion—শরীরের প্রচণ্ড আলোড়ন]
ববি ছেলেটিকে মাউথ-টু-মাউথ* দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু ম্যানুয়েল জোরে ওর
কাঁধটা খামচে ধরে পিছনে টেনে আনল। “না,” ম্যানুয়েল বলল। “তাহলে হুপিয়া তোমার
মধ্যে ঢুকে যাবে।” *[Mouth-to-mouth—মুখের মধ্যে শ্বাস দেওয়া; এটি শ্বাসপ্রশ্বাস ফিরিয়ে আনার একটি পদ্ধতি]
“ম্যানুয়েল, ভগবানের নামে—”
“না।” ম্যানুয়েল ববির দিকে
ভয়ংকর ভাবে তাকাল। “না। তুমি এসব জিনিস বুঝতে পারবে না।”
ববি মেঝেতে পড়ে থাকা দেহটার দিকে
তাকিয়ে বুঝতে পারল এখন আর কিছুতেই কিছু যায় আসে না; ছেলেটিকে বাঁচানোর আর কোনও সম্ভাবনাই
নেই। ম্যানুয়েল বাইরের লোকগুলোকে ডাকল। ওরা ভিতরে এসে দেহটাকে নিয়ে চলে গেল। এডকে দেখা গেল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছছে, ও অস্পষ্ট ভাবে বলল, “আমি নিশ্চিত আপনারা
যতটুকু পেরেছেন করেছেন।” কিছুক্ষণ পরে ববি দেখল লোকগুলো দেহটা নিয়ে গিয়ে
হেলিকপ্টারটায় তুলছে। তার কিছুক্ষণ পরেই
হেলিকপ্টারটা বাজ পড়ার মতো আওয়াজ করতে করতে আকাশে মিলিয়ে গেল।
“এই ভাল হয়েছে,” ম্যানুয়েল বলে উঠল।
ববি ওই ছেলেটার হাত দু’টোর কথা ভাবছিল। হাত দু’টোতে কাটা আর থেঁতলানোর দাগে ভর্তি ছিল, কোনও আক্রমণকে আড়াল করতে গেলে হাতে যেরকম আঘাত লাগে সেরকম আঘাত। ও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল যে ওই ছেলেটার কনস্ট্র্যাকশন
দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি; ওকে আক্রমণ করা হয়েছিল, আর ও ওর নিজের হাত দু’টো দিয়ে ওর আক্রমণকারীর আক্রমণকে বাঁধা দিচ্ছিল। “ওরা যেখান থেকে এসেছিল সেই দ্বীপটা কোথায়?” ও ম্যানুয়েলকে জিজ্ঞেস করল।
“সমুদ্রের ওদিকটায়, উপকূলটা থেকে প্রায় একশো, কিংবা একশো কুড়ি মাইল ভিতরে হবে।”
“একটা রিসর্টের জন্য
দূরত্বটা খুবই বেশি,” ববি বলল।
ম্যানুয়েল হেলিকপ্টারটাকে দেখছিল। “আশা করি ওরা আর ফিরে আসবে না।”
বেশ, ববি ভাবল, অন্তত ওর কাছে ছবিগুলো তো রয়েছে। কিন্তু যখন ও টেবিলের দিকে তাকাল, দেখল ক্যামেরাটা সেখানে নেই।
শেষপর্যন্ত ওই দিন রাতের দিকে বৃষ্টিটা
একটু থামল। ক্লিনিকের পিছন দিকে ববি ওর
বেডরুমে বসে পেপারব্যাক স্প্যানিশ ডিকশনারিটার একটা পৃষ্ঠায় আঙুল দিয়ে রেখেছিল। ওই ছেলেটা বলেছিল “র্যাপ্টর,” আর, ম্যানুয়েলের কথাগুলো বাদ দিয়ে ওর মনে হল ওটা একটা স্প্যানিশ শব্দ। ও ডিকশনারিতে শব্দটা খুঁজে পেল। যার মানে হল “র্যাভিশার১” অথবা “অ্যাবডাক্টর২।” [১Ravisher—হরণকারী, ২Abductor—অপহরণকারী]
এটা পড়ে ও থমকে গেল। শব্দটার মানে খুবই সন্দেহজনক ভাবে হুপিয়ার মানের কাছাকাছি
দাঁড়ায়। অবশ্যই ও কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না। আর কোনও ভূতও ওই ছেলেটার হাতে কাটা দাগগুলো করে দেয়নি। তাহলে ছেলেটা ওকে কী বলতে চাইছিল?
পাশের ঘর থেকে ও একটা আর্তনাদ শুনতে পেল। গ্রামের এক মহিলা প্রসব যন্ত্রণার প্রথম ধাপে রয়েছে, স্থানীয় ধাত্রী ইলিনা
ম্যোরালেস ওর দেখাশোনা করছে। ববি ক্লিনিক রুমের দিকে গিয়ে
ইলিনাকে কয়েক মুহূর্তের জন্য একটু বাইরে আসার ইশারা করল।
“ইলিনা...”
“ইয়েস, ডক্টর?”
“ইলিনা তুমি কি জানো র্যাপ্টর কী জিনিস?”
ইলিনা এক ষাট বছরের পাকা চুলওয়ালা বুড়ি, কিন্তু বাস্তব-বুদ্ধিসম্পন্ন
মহিলা, কোনও বুজরুকিতে বিশ্বাস করে না। এই রাতের বেলায়, খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে সে একটু বিরক্ত হয়েই ভ্রূকুটি করে জিজ্ঞেস
করল, “র্যাপ্টর?”
“হ্যাঁ, তুমি এই শব্দটার মানে জানো?”
“হ্যাঁ।” ইলিনা মাথা নাড়ল। “এর মানে হল... একটা লোক যে রাতের বেলায় এসে বাচ্চাদের
তুলে নিয়ে যায়।”
“কিডন্যাপার?”
“হ্যাঁ।”
“হুপিয়া?”
প্রশ্নটা শুনে ইলিনার সমস্ত ভাবভঙ্গীই
পাল্টে গেল। “ওই শব্দটা উচ্চারণ
করবেন না, ডক্টর।”
“কেন?”
“এখন হুপিয়ার কথা বলবেন
না,” ইলিনা গভীর ভাবে বলল। প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মহিলাটির আর্তনাদ শুনে সেদিকে একবার তাকিয়ে
মাথাটা নাড়িয়ে বলল, “ওই শব্দটা এখন উচ্চারণ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।”
“কিন্তু একটা র্যাপ্টর কি তার শিকারকে কামড়ে ফালাফালা করে দেয়?”
“কামড়ে ফালাফালা করে?”
ইলিনা হতবুদ্ধি হয়ে বলল। “না, ডক্টর। ঠিক ওরকম করে না। র্যাপ্টর
হল একটা লোক যে সদ্যজাত বাচ্চাদের তুলে নিয়ে যায়।” ইলিনাকে দেখে এই
আলোচনার জন্য খুবই বিরক্ত বলে মনে হচ্ছিল, যত তাড়াতাড়ি পারে ও এই
কথাবার্তার পাট শেষ করতে চাইছিল। ইলিনা আবার ক্লিনিকের দিকে
ফিরে গেল। “যখন ও রেডি হয়ে যাবে
আমি আপনাকে ডেকে নেব, ডক্টর। আমার মনে হয় আরও একঘণ্টা লাগবে, দু’ঘণ্টাও লাগতে পারে।”
ববি আকাশের তারার দিকে তাকাল, সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া সফেন
ঢেউগুলোর আওয়াজ শুনতে থাকল। অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে দূরে
নোঙর করা মাছ ধরা নৌকাগুলোর ছায়া দেখা যাচ্ছে। এই পুরো দৃশ্যপটটা কত শান্ত, কত স্বাভাবিক, এবার ওর ওই ভ্যাম্পায়ার আর
বাচ্চাদের কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলার জন্য নিজেকেই বোকা বলে মনে হল।
ববি ওর ঘরে ফিরে গেল, ম্যানুয়েল ওই শব্দটা কোনও
স্প্যানিশ শব্দ নয় বলে যে বারবার জোর দিচ্ছিল, সেই কথাটাই আবার মনে পড়তে লাগল। কৌতূহলে নয়, এমনিই ও ইংরেজি ডিকশনারিটা খুলে দেখল আর ওকে যেন অবাক করে দেওয়ার
জন্যই এখানেও ওই শব্দটা খুঁজে পেল:
raptor \ n [deriv. of L. raptor
plunderer, fr. Raptus]: bird of prey [র্যাপ্টর \ বিশেষ্য পদ (উৎপত্তি
ল্যাটিন র্যাপ্টর প্ল্যান্ডারার থেকে, ফরাসিতে র্যাপ্টাস্): বার্ড অফ প্রেই—হিংস্র শিকারি পাখি]।