জুরাসিক পার্ক – মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ; পর্ব ২)
এক, এর প্রশস্ত ভিত্তি। আমেরিকা লস অ্যালামোস-এর
(Los Alamos) একটি রিসার্চ ইন্সটিটিউশনের গবেষণার মাধ্যমে পারমাণবিক যুগে প্রবেশ
করেছিল।
এক
ডজনেরও বেশি কোম্পানির কঠোর প্রচেষ্টায় এই মহাদেশটি কম্পিউটার যুগে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু এখন শুধু
আমেরিকাতেই দু’হাজারেরও বেশি ল্যাবরেটরিতে বায়োটেকনোলজি রিসার্চ হয়। এই টেকনোলজির উপরে পাঁচশোটি
প্রতিষ্ঠান বছরে পাঁচশো কোটি ডলার খরচা করে থাকে।
দুই, বেশিরভাগ
গবেষণাগুলোই হয় হঠকারীতে ভরা নয় তুচ্ছ হয়ে থাকে। যে রকম, গবেষণা করে প্যেলার
ট্রাউট১-কে জলস্রোতের মধ্যে পরিষ্কার দেখতে পাওয়া, আজেবাজে
জিনিস ফেলানোর জন্য চৌকো ধরনের গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করা, এমন
এক ধরনের ইনজেক্টেব্ল্ সেন্ট সেল২ বানানো যাতে আপনি সব
সময় আপনার পছন্দের পারফিউমের গন্ধ শুঁকতে পারেন। এগুলো দেখেশুনে হয়তো হাসি-ঠাট্টার
ব্যাপার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে সত্যিটা হল যে, বায়োটেকনোলজি
এমন একটা ব্যাপার যাকে শিল্প জগতের প্রথাগত বিষয়, ফ্যাশন
জগতের কল্পনার মধ্যেও প্রয়োগ করা যায়। যেমন, কসমেটিক্স৩ আর ল্যেইশিওর
অ্যাক্টিভিটিস্৪। এই নতুন শক্তিশালী টেকনোলজির খামখেয়ালী ব্যবহার সম্বন্ধে প্রচণ্ড
সজাগ থাকা উচিত। [১Paler trout—এক ধরনের ট্রাউট মাছ, ২Injectable
scent cell—ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে স্থাপন করা যাবে এ রকম এক ধরনের
সুগন্ধী কোষ, ৩Cosmetics—প্রসাধনী, ৪Leisure
activities—অবসর সময় কাটানোর জিনিস]
তিন, বায়োটেকনোলজি
ব্যাপারটির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ এটির তত্ত্বাবধান করে না। কোনও ফেডেরাল্ ল্য১ একে নিয়ন্ত্রণ করে
না। আমেরিকা বা সারা
পৃথিবীর কোথাও একে আটকানোর জন্য কোনও সুসঙ্গত গভর্নমেন্ট পলিসি২ নেই। আর তার কারণ হল বায়োটেকনোলজির
প্রোডাক্টের পরিধি ওষুধ থেকে শুরু করে কৃষি-ফসল হয়ে কৃত্রিম বরফ অবধি ছড়িয়ে রয়েছে। তাই একে আটকানোর জন্য
কোনও ইন্টেলিজেন্ট পলিসি৩ তৈরি করাটা বেশ শক্ত একটা ব্যাপার। [১Federal law—যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন, ২Government policy—সরকারি কৌশল বা আইন, ৩Intelligent policy—বুদ্ধিদীপ্ত
কৌশল বা আইন]
কিন্তু সব থেকে পীড়াদায়ক
সত্যিটা হল যে, এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিজ্ঞানীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে নিজেদের মধ্যে
মোতায়েন করা কোনও নজরদারকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা একটা খুবই লক্ষণীয় ব্যাপার যে, প্রায়
প্রত্যেক বিজ্ঞানী যারা জেনেটিক্স রিসার্চ* করে থাকেন তাঁরা কিন্তু
এর সাথে সাথে বায়োটেকনোলজিকে পণ্যে রূপান্তরিত করার ব্যাপারটার মধ্যেও নিজেকে
জড়িয়ে ফেলেন। এই
দু’টো ব্যাপারকে আলাদা করার জন্য কোনও পর্যবেক্ষক নেই। সবাইকেই যেন খুঁটি
দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। *[Genetics research—সৃষ্টি সম্বন্ধীয় গবেষণা]
মলিকিউলার বায়োলজি*-কে বাণিজ্যিক পণ্যে
পরিণত করার ঘটনাটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে সব চেয়ে অবাক করা একটি নৈতিক ঘটনা, আর ব্যাপারটা
বিস্ময়কর গতিতে ঘটেছে। চারশো বছর আগে গ্যালেলিওর সময় থেকে, বিজ্ঞান সব
সময়ই মুক্ত এবং খোলামেলা এক জিজ্ঞাসা হিসেবে প্রকৃতির কর্মকাণ্ডের ভিতর দিয়ে এগিয়ে
চলেছে। বিজ্ঞানীরা সব সময়েই
দেশের জাতীয় সীমারেখাকে অগ্রাহ্য করে এসেছেন, নিজেদেরকে রাজনীতি এমনকী যুদ্ধেরও ক্ষণস্থায়ী
উদ্বিগ্নতার উপরে নিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানীরা সব সময়েই গবেষণার গোপনীয়তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ
প্রকাশ করে এসেছেন। এমনকী তাঁদের আবিষ্কারের
উপরে পেটেন্টের সিলমোহর লাগানোর অভিপ্রায়ের কথা শুনে, নিজেদেরকে
সমস্ত মানবজাতির হিতের হয়ে কাজ করতে দেখেও ভ্রূকুটি করে উঠেছেন। আর অনেক পুরুষ ধরেই, বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারগুলোর
মধ্যে প্রকৃতপক্ষেই এক অদ্ভুত নিঃস্বার্থ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। *[Molecular biology—আণবিক জীববিদ্যা]
যখন, ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ডের
দুই তরুণ গবেষক, জেমস ওয়াটসন (James Watson) আর ফ্রান্সিস
ক্রিক (Francis Crick), ডিএনএ-র সাংকেতিক গঠনের অর্থ উদ্ধার করল, তাদের কাজকে এই জগতকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বুঝতে পারার এক শতাব্দী-প্রাচীন
খোঁজকে, মানবাত্মাকে শোভাযাত্রা করে মুক্তি দেওয়ার মতো একটি বিরাট
ব্যাপার বলে গণ্য করা হয়েছিল। দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে, তাদের এই আবিষ্কার
মানবজাতির মহান হিতের কাজে নিঃস্বার্থ ভাবে রাস্তা দেখাবে।
যদিও সেটা হয়নি। তিরিশ বছর পরে, ওয়াটসন আর
ক্রিকের প্রায় সমস্ত বিজ্ঞানী সহকর্মীরা সম্পূর্ণরূপে আরও অন্যান্য কর্মোদ্যোগে জড়িয়ে
পড়লেন। মলিকিউলার
জেনেটিক্স১-এর উপরে করা গবেষণা একটি বিশাল আকার ধারণ করল, শত শত কোটি ডলারের কমার্শিয়াল
আণ্ডারটেকিং২ তৈরি হল, আর এর সূত্রপাতের সময় ১৯৫৩ সাল না ধরে ১৯৭৬
সালের এপ্রিল মাসটাকে ধরা যেতে পারে। [১Molecular
genetics—আণবিক সুপ্রজনন বিদ্যা, ২Commercial
undertaking—বাণিজ্যিক উদ্যোগ]
No comments:
Post a Comment