জুরাসিক পার্ক - মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ) পর্ব ১
মাইকেল ক্রিকটন
(ভাষান্তর এবং সম্পাদনা – দেবাশীষ কর্মকার)
"Reptiles are abhorrent
because of their cold body,
pale color, cartilaginous skeleton, filthy skin, fierce aspect, calculating
eye, offensive smell, harsh voice, squalid habitation, and terrible venom; wherefore their Creator has
not exerted his powers to make many of them." (সরীসৃপদের
ঠাণ্ডা শরীর, দেহের বিবর্ণ রং,
তরুণাস্থিতুল্য অস্থিসমূহ, গা গুলিয়ে দেওয়ার মতো চামড়া, হিংস্র আকৃতি, সতর্ক চোখ, কটু
গন্ধ, কর্কশ স্বর, নোংরা বাসস্থান, আর ভয়ংকর বিষের কারণে জঘন্য ঘৃণ্য দেখতে লাগে; যে
কারণে তাদের সৃষ্টিকর্তা তাদের মতো অসংখ্যকে সৃষ্টি করতে তাঁর শক্তিকে প্রয়োগ
করেননি।)
LINNAEUS, 1797 (লিনায়েউস, ১৭৯৭)
"You
cannot recall a new form of life." (তুমি জীবনের এক নতুন
আকৃতি ফিরিয়ে আনতে পারো না।
ERWIN CHARGAFF, 1972 (আরউইন চ্যারগাফ, ১৯৭২)
অনুবাদকের কথা
ছোটবেলায় প্রথম সিনেমা হলে গিয়ে যে সিনেমাটা দেখেছিলাম
সেটা স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত 'জুরাসিক পার্ক।' শুধু আমাকে কেন, সিনেমাটা আট থেকে
আশি সব বয়সিদের অভিভূত করে দিয়েছিল এবং এখনও করে। এর পর আমার সাথে দু’টো ঘটনা ঘটে। এক, আমি বিদেশি সিনেমা
(মূলত হলিউড) আর বিদেশি সাহিত্যের (মূলত কল্পকাহিনী) অনুরাগী হয়ে পড়ি। যদিও এর আগে টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স, অরণ্যদেব, ম্যানড্রেকদের সাথে পরিচিতি ছিল, কিন্তু সেগুলো কমিক্স, গল্প বা উপন্যাস নয়। দুই, এই উপন্যাসের
দু’টি চরিত্র টিম আর গ্রান্টের মতো এক ডাইনোসর-পাগল হয়ে উঠি। তার পর যখন যেখানে ডাইনোসরদের
সম্বন্ধে যা দেখেছি যা শুনেছি সেগুলো গোগ্রাসে গিলেছি। একটু বড় হওয়ার পর জানতে পারলাম 'জুরাসিক পার্ক' সিনেমাটি মাইকেল ক্রিকটন রচিত একই নামের একটি উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে
(যদিও সিনেমাটির টাইটেল কার্ডে সেটি উল্লেখ করা রয়েছে, কিন্তু ওই বয়সে কে-ই বা টাইটেল কার্ড
দেখে)। সঙ্গে সঙ্গে উপন্যাসটি
সংগ্রহ করতে উঠেপড়ে লেগে যাই। তখনই লক্ষ্য করি উপন্যাসটির কোনও বাংলা অনুবাদ নেই, এর আগে অনেক বিদেশি
সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ পড়েছি, কিন্তু এটির বাংলা অনুবাদটি কোথাও
খুঁজে পেলাম না (অবশ্য আমার অনুসন্ধানে খামতি থাকতে পারে)। এর পরেই উপন্যাসটির বাংলা
অনুবাদ করার ভাবনা মাথায় আসে। শুধুমাত্র নিজের
তাগিদে, স্টিভেন স্পিলবার্গের এক জন
অন্ধভক্ত হিসেবে (এই অনুবাদটির ছবিগুলি ওঁরই পরিচালিত 'জুরাসিক পার্ক' ও 'দ্য লস্ট
ওয়ার্ল্ড: জুরাসিক
পার্ক' সিনেমা থেকে নেওয়া হয়েছে; অবশ্য একদম শেষের ডাইনোসর এবং অন্যান্য জীবজন্তু, উদ্ভিদ, যানবাহন ও বস্তুর ছবিগুলি বাদে।) এবং লৌকিকতা করে বললে
মাইকেল ক্রিকটনকে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে, এই উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ করলাম। উপরোক্ত উক্তি দু’টির মূল এবং বাংলা
অনুবাদ দু’টি রূপই দেওয়া হল, উপন্যাসটি
যেহেতু বিদেশি সে-জন্য এতে কিছু কিছু শব্দের বাংলা উচ্চারণ সঠিক না হতে পারে ভেবে সেগুলির
মূল ইংরেজী শব্দগুলিরও উল্লেখ করেছি (কয়েকটি স্প্যানিশ ও ফরাসি শব্দও রয়েছে)। বেশ কিছু শব্দের বাংলা
অর্থের জন্য আমাকে অভিধানের সহায়তা নিতে হয়েছে, তবুও বলব যদি কোনও শব্দের অর্থ, উচ্চারণ বা অন্য যে কোনও কিছুর ক্ষেত্রে মূল উপন্যাসটির সঙ্গে এই অনুবাদটিতে
কোনও ভুলত্রুটি বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, সেগুলি সম্পূর্ণরূপে
অনিচ্ছাকৃত, সেগুলিকে ক্ষমার্হ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ভূমিকা: ‘ইনজেন-এর ঘটনা’
বিগত বিংশ শতাব্দী এক
আশ্চর্যজনক সামঞ্জস্যের সায়েন্টিফিক১ গোল্ড রাশ২-এর সাক্ষী থেকেছে: যা হল জেনেটিক
ইঞ্জিনিয়ারিং৩-কে হঠকারী হয়ে এবং প্রচণ্ড দ্রুত গতিতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত
করা। এই বিপজ্জনক উদ্যোগটি
বাইরের লোকের কাছে খুবই অল্প প্রচার করে বেশ দ্রুত ভাবেই করা হয়েছে এই জানিয়ে যে, সকলের এর মাত্রা
ও তাৎপর্য বোঝার মতো ক্ষমতা নেই। [১Scientific—বিজ্ঞানসম্মত, ২Gold rush—নতুন আবিষ্কৃত সোনার খনিতে ভর্তি এমন জায়গার দিকে
সোনা শিকারিদের ছুটে যাওয়া, ৩Genetic
engineering—সৃষ্টি সম্বন্ধীয় যন্ত্রবিজ্ঞান]
মানবজাতির ইতিহাসে বায়োটেকনোলজি* বেশ কয়েকটি মহান বৈপ্লবিক
ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছে। এই দশকের শেষে, এই টেকনোলজি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পারমাণবিক
শক্তি আর কম্পিউটারের প্রভাবকে সবেগে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এক পর্যবেক্ষকের কথায়, “বায়োটেকনোলজি
মানবজীবনের প্রত্যেকটি দিককে বদলে দিতে চলেছে: আমাদের মেডিকেল
কেয়ার, আমাদের খাবার, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের বিনোদন, এমনকী আমাদের শরীরকেও। একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি
আর কখনওই হবে না। এটা
আক্ষরিক অর্থেই এই গ্রহের চেহারা বদলে দিতে চলেছে।” *[Biotechnology—জীব সম্পর্কিত প্রযুক্তিবিদ্যা]
কিন্তু বায়োটেকনোলজি বিপ্লবকে
অতীতের বৈজ্ঞানিক পরিবর্তনগুলোর থেকে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ ভিন্নমতে গণ্য করা হয়।
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment