'দ্য থিং' এবং...
পূর্বেই বিধিসম্মত সতর্কীকরণ— গুছিয়ে লেখার
অভ্যেস নেই এবং ‘ননলিনেয়ার’ ব্যাপারটির বিশেষ অন্ধভক্ত হওয়াতে লেখাটার কিন্তু
কোনও মাথামুণ্ডু খুঁজে পাবেন না, অতএব পড়ার ঝুঁকি ও দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার, দয়া
করে মামলা ঠুকবেন না! না, 'মার্ভেল'-এর ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’-এর ‘দ্য থিং’, ও ‘ম্যান-থিং’,
বা ‘ডিসি’-র ‘সোয়াম্প থিং’-এর কথা বলা হচ্ছে না, এ ‘থিং’ আলাদা। বিস্তারিত সব বলব,
তার আগে কিছু আকাজের কথা সেরে নিই। কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন— খুবই জটিল, ভজঘট
একটা ব্যাপার, এমন অনেক জিনিস বা কথা থাকে যেগুলোর সঠিক অর্থ বাংলায় লিখতে-পড়তে গেলে
একটু দাঁত কিড়মিড় করে বৈকি! (আমাদের আবার একটা ব্যাপার আছে— ইংরেজিতে গাল পাড়লেও
আমরা ঘুরিয়ে ‘ইংরেজিতে ধন্যবাদ’ বলি, কিন্তু সেই গালটা বাংলায় দিলেই তৎক্ষণাৎ অসমাপ্ত
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধাতে দু’বার ভাবি না!) নমুনা দেব?— আজকে আমায় কেউ আটকাতে
পারবে না, আগেই বলে নিয়েছি ‘আকাজের কথা’, কেন, কীজন্য, একেবারে শেষে গিয়ে বুঝতে
পারবেন। যেমন— ইংরেজিতে ‘শিট’, ‘ড্যাম’, ‘সোয়াইন’, ‘নতুন আমদানি ফা!<’ বললে
বেশ ‘সাংস্কৃতিক’ হওয়া যায়, ‘আধুনিক’ হওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোরই বাংলা তর্জমা করলে
কী দাঁড়ায় সেটা উল্লেখ করে ‘ঘেঁটে ঘ’ করছি না! আবার কিছু কথার বাংলায় এমন চল হয়ে
গেছে যে সেগুলোর বাংলা করলেই লোকে এমন প্রতিক্রিয়া দেবে যেন ভিনগ্রহের প্রাণী,
ভাবুন তো, চেয়ার-টেবিল, রেল-ট্রেনের বাংলা করলে কী দাঁড়াবে! এত কথা কেন বলছি সেটা
জায়গা মতো উল্লেখ করব। এবার আরেকটা প্রসঙ্গে চলে যাই ঠিক আছে? ইংরেজিতে একটা কথা
আছে, যদ্দুর মনে হয় মার্কিন আমদানি— bad @$$; সাংকেতিক ভাবে
লিখলাম, যারা বোঝার ঠিক বুঝে যাবেন, উপায় নেই, ঘেঁটে ঘ করলে বিবেচনা পর্ষদ (সেন্সর
বোর্ড আরকি!- আগেও একটা সব্বোনেশে কথা লিখে ফেলেছি!) A শংসাপত্রও
দেবে না, তাই ইউ/এ ভার্শনে লেখা হচ্ছে! কথাটার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায় (মানে আমার
কাছে) সর্বনাশা, মাথা খারাপ করে দেওয়া, ঠিক তেমনি একটা সব্বোনেশে সিনেমা জন
কারপেন্টার-এর ‘দ্য থিং (১৯৮২)’, যার মূল কাহিনি— ‘হু গোজ দেয়ার?’ লিখেছিলেন ডন এ.
স্টুয়ার্ট ছদ্মনামে জন উড ক্যাম্পবেল জুনিয়র ১৯৩৮ সালের দিকে (কল্পবিজ্ঞানের
কাহিনি কেন ছদ্মনামে লিখেছিলেন তা জানি না, কেউ জানলে একটু জানাবেন দয়া করে!)। এই
কাহিনি অবলম্বনে তিনটি সিনেমা (১৯৫১, ১৯৮২, ২০১১) প্রকাশিত হয়েছে। সেই কাহিনি
অবলম্বনে ও অনুকরণে একসাথে চারটে সম্পূর্ণ কমিক্স (চারটেই খুঁজে পেয়েছি, আর পাইনি,
কেউ পেলে জানাবেন দয়া করে!), প্রথম কমিকস্টি ১৯৫১’র মার্চ মাসে ‘অ্যাডভেঞ্চারস
ইনটু দ্য আননোন’-এর ১৭ নম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, ‘বিস্ট ফ্রম দ্য বিয়ন্ড’ নামের
এই কমিকস্টির শিল্পী এডভার্ড মর্টিজ (বাংলা নামকরণ ‘পরলোকের দানব’)। দ্বিতীয়টি
১৯৫২’র নভেম্বর-ডিসেম্বরের ‘উইর্ড ফ্যান্টাসি’-র ১৬ নম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, ‘দ্য
গ্রিন থিং!’ নামের এই কমিক্সটির চিত্রনাট্য লিখেছেন অ্যালবার্ট বি. ফেল্ডস্টাইন,
ছবি এঁকেছেন জো অরলান্ডো (বাংলা নামকরণ ‘সেই সবুজ জিনিসটা!’)। তৃতীয় কমিক্সটি ডিসেম্বর
১৯৫১ থেকে জানুয়ারি ১৯৫২’র ‘দ্য ভল্ট অফ হরর’-এর ২২ নম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, ‘দ্য
মনস্টার ইন দ্য আইস!’ নামের এই কমিক্সটির চিত্রনাট্য লিখেছেন অ্যাল ফেল্ডস্টাইন ও
বিল গেইন্স, ছবি এঁকেছেন গ্রাহাম ইঙ্গেল্স (যদিও কমিক্সটিতে সই করা রয়েছে
ঘাস্টলি বা গাস্টলি বলে), বাংলা নামকরণ ‘বরফের রাক্ষস’ এবং গল্পটি যিনি বলছেন সেই
ডাইনি বুড়ির নামে— ডাইনি বুড়ির হাঁড়ি। এই তিনটে কমিক্সই ক্যাম্পবেলের বড়গল্পটি
থেকে অনুকরণ করা। চতুর্থটি কমিক্সটি তাঁর গল্প অবলম্বনে করা ১৯৭৬’এ ‘স্টারস্ট্রিম’-এর
১ম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, এটির চিত্রনাট্য লিখেছেন আর্নল্ড ড্রেক এবং ছবি এঁকেছেন
জ্যাক অ্যাবিল। এবার সিনেমাটার কথা কেন বললাম?— আবার অন্য প্রসঙ্গ! আমার একটা
বিচ্ছিরী, বিদঘুটে নেশা আছে— আবহসঙ্গীত শোনা (আবহসঙ্গীতের মানে কী জানার জন্য
অভিধান দেখুন— অভিধানের মানে জানার জন্য ডিকশনারি দেখুন! মানে’র কথায় মনে পড়ল,
একবার এই অধমের করা একটা কল্পবিজ্ঞানের অনুবাদ দেখে একজন মন্তব্য করেছিলেন— “আচ্ছা,
এটা কি অনুবাদ না মানে বই?”, তিনি এটা বুঝতে পারেননি যে তিনি যেটা বুঝতে পারছেন
সেটা অন্যেরা বুঝতে না’ও পারে, কিন্তু তার জন্য তাঁরা বঞ্চিত হবেন কেন? অনুবাদটা
করার সময় আমার নিজেরও পাঠক হিসেবে ওটাকে মানে বই-ই মনে হচ্ছিল, কিন্তু ওই যে আগেই
বলেছিলাম, চেয়ার-টেবিলের যেমন বাংলা লিখলে পাগলের মতো শোনায়, তেমন বিজ্ঞান বা
কল্পবিজ্ঞানেরও কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো ইংরেজিতে শুনলে বা পড়লে বেশি মানানসই বলে
মনে হয়।)। যাকগে, এবার এই নেশাটার ব্যাপারে অমন বিশেষণ কেন প্রয়োগ করলাম? ক’টা
নমুনা দিই, আশা করি বুঝে যাবেন— “কী বাচ্চাদের মতো সারাদিন এইসব মিউজিক শোনো?”, “আচ্ছা,
আপনি সারাদিন এইসবই শোনেন, গান শোনেন না?”— কী বলব? একটা সাজেশন আছে, ‘দ্য থিং (১৯৮২)’
সিনেমাটা যদি দেখা থাকে, তাহলে জানবেন আমার আগের লেখা bad @$$ কথাটার মানে কী, না দেখা থাকলে দেখে ফেলুন, আর এই কমিকসগুলো পড়ার সময় ওই
সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা ‘ব্যাকগ্রাউন্ডে’ চালিয়ে পড়বেন, আলাদা একটা ফিলিং
পাবেন গ্যারান্টি! তবে আর কী, গুরুদেব মোরিকোনের (Ennio Morricone) মিউজিক ছেড়ে দিয়ে
কমিক্সগুলো উপভোগ করুন, আর হ্যাঁ, আপনাদের কারোর যদি আমার মতো এই বিদঘুটে নেশাটা
থেকে থাকে তাহলে একটু জানাবেন দয়া করে, মানে আপনার কাছ থেকে আরও মণিমুক্তোর
সন্ধানও তো পেয়ে যেতে পারি। আর একটা কথা, এত লম্বা ফিরিস্তি পড়ে যদি আপনাদের মাথা
খারাপ হয়ে গিয়ে থাকে, মামলা ঠোকার মনস্থির যদি করে থাকেন, তাহলে নীচের কমেন্ট-বক্সে একটু জানাবেন দয়া করে! আজ এখানেই শেষ করছি তাহলে, ভাল থাকবেন!
অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteআমি খুব বিশেষ একটা তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট করি না, এ-তথ্যগুলির পুরোটাই অন্তরজাল দুনিয়া থেকে সংগ্রহ করা, তাও আপনার যে ভাল লেগেছে (তথ্যগুলি) এটাই অনেক বড় পাওনা, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!
DeleteEi background e music chalie erokom special comics porar bapar ta bapok.valo laglo
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে! আমি আসলে বলতে পারেন একরকম ‘ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শোনার পোকা’। কমিক্স ও আবহসঙ্গীতের গাঁটছড়া বাঁধার অনুভূতিটা আপনার ভাল লেগেছে শুনে আমারও খুব ভাল লাগল! :)
Delete