জুরাসিক পার্ক – মাইকেল ক্রিকটন (বাংলা অনুবাদ; পর্ব ৬)
“কতক্ষণ আগে ব্যাপারটা ঘটেছে?”
“একঘণ্টা।”
ও আবারও লক্ষ্য করল এড রেগিস
উত্তর দিতে কীরকম ঘাবড়ে যাচ্ছে। ওদের মধ্যে এডকে দেখে খুবই উৎসুক আর অল্পতেই ঘাবড়ে যাওয়া
লোক বলে মনে হচ্ছে। আর ওকে দেখে একজন কনস্ট্র্যাকশন
ফোরম্যান বলেও মনে হচ্ছে না। তার চেয়ে বেশি কোনও এক্সিকিউটিভ বলে মনে হচ্ছে। ও নিশ্চয়ই ওর বোধবুদ্ধির
বাইরে চলে গেছে।
ববি ছেলেটার দিকে ফিরল। যে কোনও ভাবেই হোক ওর
মনে হল না যে, ও কোনও মেকানিক্যাল ট্রমা* দেখছে। আঘাতগুলোকে দেখেও ঠিক
সুবিধার বলে মনে হচ্ছিল না। মাটি লাগলে ক্ষতস্থানে যে সংক্রমণ হয় তার কোনও চিহ্ন নেই, আর পিষে গিয়ে
আঘাত পেলে যা যা চিহ্ন থাকে তা-ও নেই। নিজের দোষে হওয়া মেকানিক্যাল
ট্রমা, ফ্যাক্টরিতে হওয়া দুর্ঘটনায় সব সময় আঘাত পাওয়ার কিছু-না-কিছু চিহ্ন থেকে
যায়। কিন্তু
সেরকম কিছুই চোখে পড়ছে
না। তার পরিবর্তে, ছেলেটার কাঁধের
জায়গার মাংস কাপড়ের মতো ফালাফালা হয়ে আছে, এমনকী ওর থাইয়েরও একই
রকম অবস্থা হয়েছে। *[Mechanical Trauma—যন্ত্র থেকে পাওয়া আঘাত]
যেটা দেখে পুরোপুরি মনে হচ্ছে
যে, ওকে কিছু দিয়ে বাড়ি মারা হয়েছে। আবার আরেকদিক থেকে দেখলে, শরীরের বেশিরভাগ
জায়গাতেই আঘাতের চিহ্ন নেই, যা একটা জানোয়ারের আক্রমণের
ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ব্যাপার। ও আবার ছেলেটার মাথার দিকে দেখতে লাগল, ওর বাহু, ওর হাত দু’টো—
ওর হাত দু’টো !
ছেলেটার হাত দু’টোর দিকে তাকিয়ে
ও নিজের শরীরে একটা শিরশিরানি অনুভব করতে শুরু করল। দু’টো হাতের
তালুতেই ছোট ছোট কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে, আর কনুই থেকে কব্জি অবধি
জায়গাটাতে থেঁতলানোর দাগ দেখা যাচ্ছে। এর মানেটা যে কী দাঁড়ায় সেটা বুঝতে
শিকাগোতে ওর যথেষ্ট দিন কাজ করা হয়ে গেছে।
“ঠিক আছে,” ও বলল। “বাইরে অপেক্ষা করুন।”
“কেন?” এড সচকিত
হয়ে জিজ্ঞেস করল। বোঝাই যাচ্ছে কথাটা ওর ঠিক পছন্দ হয়নি।
“আমি ওর সাহায্য করি সেটা
আপনি চান, নাকি চান না?” ববি কথাটা জিজ্ঞেস করে এডকে ধাক্কা
মেরে বাইরে বের করে দিয়ে মুখের ওপরে দরজাটা বন্ধ করে দিল। ও এটা জানে না যে এখানে
কী চলছে, কিন্তু যা-ই চলুক না কেন ব্যাপারটা ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ম্যানুয়েল ইতস্তত করছিল। “আমি কি পরিষ্কার
করতে থাকব?”
“হ্যাঁ,” ববি বলল। ও ওর ছোট অলিম্পাস পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুট ক্যামেরাটা হাতে
তুলে নিল। আলোটাকে
ঠিক করে ক্ষতস্থানগুলোর বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। ও ভাবছিল, এগুলোকে দেখে
সত্যিই কামড়ের দাগ বলে মনে হচ্ছে। এমন সময়ে ছেলেটা যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠল, ও তাড়াতাড়ি
করে ক্যামেরাটা রেখে দিয়ে ছেলেটার দিকে ঝুঁকে পড়ল। ছেলেটার ঠোঁট দু’টো নড়ে উঠল, ওর জিভ জড়িয়ে গেছে।
“র্যাপ্টর,” ছেলেটা বলে উঠল। “লো সা র্যাপ্টর (Lo sa raptor)...”
কথাগুলো শুনে ম্যানুয়েল পুরো
পাথর হয়ে গেল, ভয়ে আতঙ্কে পিছনের দিকে হঠতে লাগল।
“এর মানে কী?” ববি জিজ্ঞেস
করল।
ম্যানুয়েল ওর মাথাটা নাড়তে
লাগল। “আমি জানি না, ডক্টর। ‘লো সা র্যাপ্টর’— নো এস এস্পানোল (Lo sa raptor’— no es español)।”
“না?” ববিরও শুনে
মনে হয়েছিল এটা স্প্যানিশ ভাষা। “তাহলে দয়া করে ওকে পরিষ্কার করতে থাকো।”
“না, ডক্টর।” ম্যানুয়েল নাক টানল। “বিচ্ছিরি গন্ধ।” বলে বুকে ঘন ঘন
ক্রস আঁকতে লাগল।
ববি আবার ক্ষতস্থানে ডোরাকাটা
ভাবে ছড়িয়ে থাকা ওই পিচ্ছিল ফেনার দিকে তাকাল। আঙুলের মাথা দিয়ে একটুখানি
তুলে নিয়ে ঘষতে লাগল। দেখে তো লালা বলে মনে হচ্ছে...
আহত ছেলেটার ঠোঁট আবার নড়ে উঠল। “র্যাপ্টর,” ফিসফিস করে বলল।
ম্যানুয়েল প্রচণ্ড ভয়ে ভয়ে বলল, “ওটা ওকে
কামড়েছে।”
“কী ওকে কামড়েছে?”
“র্যাপ্টর।”
“র্যাপ্টর মানে
কী?”
ববি ভ্রূকুটি করল। কোস্টা রিকা-র লোকেরা সাধারণত
কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়, কিন্তু এর আগে ও গ্রামে এটার কথা শুনেছে। ওরা রাতের ভূতের কথা
বলে থাকে, মুণ্ডুহীন রক্তচোষা যে ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়। বিশ্বাস করা হয় যে, আগে হুপিয়া কোস্টা
রিকা-র পাহাড়গুলোতে থাকত, কিন্তু এখন উপকূলবর্তী ওই দ্বীপগুলোতে বাস করে।
ম্যানুয়েল ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল, বুকে ঘন ঘন
ক্রস আঁকতে লাগল আর বিড়বিড় করতে লাগল। “ওই গন্ধটা কোনও সাধারণ গন্ধ
নয়,” ও বলল। “এ নির্ঘাত হুপিয়া।”
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment